Print Sermon

এই ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য হল ধর্ম্মোপদেশের পান্ডুলিপি এবং ধর্ম্মোপদেশের ভিডিওগুলি বিশ্বব্যাপী পালক ও মিশনারিদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে, যেখানে ধর্ম্মতত্ত্বমূলক সেমিনারী বা বাইবেল স্কুল থাকলেও খুব কম রয়েছে|

এই সমস্ত ধর্ম্মোপদেশের পান্ডুলিপি ও ভিডিওগুলি www.sermonsfortheworld.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এখন প্রতি বছর 221টি দেশের প্রায় 1,500,000 কম্প্যুটারে যায়| আরও শত শত লোক ইউটিউবের ভিডিওর মাধ্যমে এগুলি দেখেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তারা ইউটিউব ছেড়ে বেরিয়ে যান এবং আমাদের ওয়েবসাইটে চলে আসেন| ইউটিউব আমাদের ওয়েবসাইটে লোক এনে দেয়| ধর্ম্মোপদেশের পান্ডুলিপিগুলি প্রতি মাসে 46টি ভাষায় প্রায় 120,000 কম্প্যুটারে প্রচারিত হয়| ধর্ম্মোপদেশের পান্ডুলিপিগুলি গ্রন্থসত্ত্ব দ্বারা সংরক্ষিত নয়, কাজেই প্রচারকগণ আমাদের অনুমতি ছাড়াই এইগুলি ব্যবহার করতে পারেন| মুসলিম এবং হিন্দু রাষ্ট্রসমেত, সমগ্র পৃথিবীতে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার এই মহান কাজে সাহায্য করার জন্য কিভাবে আপনি একটি মাসিক অনুদান প্রদান করতে পারেন তা জানতে অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন|

যখনই আপনি ডঃ হেইমার্‌সকে লিখবেন সর্বদা তাকে জানাবেন যে আপনি কোন দেশে বাস করেন, অথবা তিনি আপনাকে উত্তর দিতে পারবেন না| ডঃ হেইমার্‌সের ই-মেল ঠিকানা হল rlhymersjr@sbcglobal.net |




রক্তাত ঘর্ম্ম

THE BLOODY SWEAT
(Bengali)

লেখক : ডঃ আর. এল. হাইমার্স, জুনিয়র|
by Dr. R. L. Hymers, Jr.

2016 সালের, 6ই মার্চ, প্রভুর দিনের সন্ধ্যাবেলায় লস্ এঞ্জেল্সের
ব্যাপটিষ্ট ট্যাবারন্যাক্ল মন্ডলীতে এই ধর্ম্মোপদেশটি প্রচারিত হয়েছিল
A sermon preached at the Baptist Tabernacle of Los Angeles
Lord’s Day Evening, March 6, 2016

‘‘আরও একাগ্রভাবে প্রার্থনা করিলেন: আর তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘণীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল’’ (লূক 22:44)|


এই প্রচারটি সি. এইচ. স্পারজিয়নের দুটি বিখ্যাত প্রচার, “The Agony in the Garden” (October 18, 1874) এবং “Gethsemane” (February 8, 1863) এর উপরে ভিত্তি করে প্রস্তুত| আমি আপনাকে প্রচারের যুবরাজ দ্বারা প্রস্তুত করা এই দুটি শ্রেষ্ঠ অবদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিচ্ছি| এখানে কোন কিছুই মৌলিক নয়| অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষামনষ্ক আধুনিক লোকদের জন্য আমি এই প্রচারগুলি কিছুটা সহজতর করেছি| এই চিন্তা ভাবনাগুলি সমস্ত বিখ্যাত প্রচারকদের প্রচার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, এবং আমি আপনাদের সামনে এগুলি উপস্থাপিত করছি এই আশা নিয়ে যে স্পারজিয়নের দ্বারা অঙ্কিত গেৎশিমানী বাগানে খ্রীষ্টের প্রতিকৃতি আপনার আত্মাকে আকর্ষণ করবে এবং আপনার চিরন্তন লক্ষ্যকে পরিবর্তিত করবে|

যীশু নিস্তারপর্বের ভোজ খেলেন এবং শিষ্যদের সঙ্গে প্রভুর ভোজ উদ্যাপন করলেন| তারপরে তিনি তাদের সঙ্গে করে গেৎশিমানীর বাগানে গেলেন| তাঁর মর্ম্মবেদনা শুরুর জন্যে তিনি গেৎশিমানী বাগানকে বেছে নিয়েছিলেন কেন? সেটা কি এই কারণে যে আদমের পাপ একটি বাগানে আমাদের ধ্বংস করেছিল, ইডেনের সেই বাগানে; যাতে করে সর্বশেষ আদম আমাদের পুনঃস্থাপিত করার ইচ্ছা করেছিলেন অন্য একটি বাগানে, সেই গেৎশিমানীর বাগানে? খ্রীষ্ট মাঝে মধ্যেই প্রার্থনা করার জন্যে গেৎশিমানীর বাগানে যেতেন| সেটা ছিল এক জায়গা যেখানে তিনি এর আগেও বহুবার গিয়েছিলেন| যীশু চাইছেন যেন আমরা দেখি যে আমাদের পাপ তাঁর সম্বন্ধিত সমস্ত বিষয়কে দুঃখে পরিবর্তিত করেছে| সেই স্থান যেখানে তিনি সবচাইতে বেশি আনন্দ উপভোগ করতেন সেই স্থানে তাঁকে অসীম দুঃখভোগ করার জন্যে আহ্বান করা হয়েছিল|

অথবা তিনি হয়তো গেৎশিমানীকে এই কারণে বেছে থাকতে পারেন যে সেই জায়গা তাঁকে অতীতকালের প্রার্থনার বিষয়গুলিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল| সেটা ছিল সেই জায়গা যেখানে ঈশ্বর প্রায়শই তাঁর প্রার্থনার উত্তর দিতেন| তিনি সম্ভবত অনুভব করেছিলেন যে তাঁর তখন প্রার্থনার উত্তরের প্রয়োজন হয়ে পড়বে যা তাঁকে সাহায্য করবে, যখন তিনি মর্ম্মবেদনার মধ্যে প্রবেশ করবেন|

তিনি প্রার্থনা করার জন্যে গেৎশিমানীতে গিয়েছিলেন সম্ভবত তার প্রধান কারণ ছিল এটাই যে সেখানে যাওয়ার অভ্যাস তাঁর ছিল, এবং সকলেই সেটা জানতো| যোহন আমাদের বলছেন, ‘‘আর যিহূদা, যে তাঁহাকে সমর্পণ করিয়াছিল, সে সেই স্থান জ্ঞাত ছিল: কারণ যীশু অনেকবার আপন শিষ্যগণের সঙ্গে সেই স্থানে একত্র হইতেন’’ (যোহন 18:2)| যীশু ইচ্ছাকৃতভাবে সেই জায়গায় গিয়েছিলেন যেখানে তিনি জানতেন যে তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করবে| যখন তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করার সময় উপস্থিত হয়েছিল, তিনি গিয়েছিলেন সেইভাবে ‘‘মেষশাবকেরা যেমন হত হইবার জন্য নীত হয়’’ (যিশাইয় 53:7)| তিনি মহাযাজকের সৈন্যদল থেকে লুকিয়ে ছিলেন না| তাঁকে চোরের মতন, অথবা গুপ্তচরদের মতন করে খুঁজে বের করার প্রয়োজন হয় নি| যীশু ইচ্ছাক্র্তভাবে সেখানে গিয়েছিলেন যেখানে বিশ্বাসঘাতকেরা সহজেই তাঁকে খুঁজে পেতে পারে এবং তাঁর শত্রুরা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে|

এখন আমরা গেৎশিমানীর বাগানে প্রবেশ করছি| কত অন্ধকার আর ভয়ঙ্কর ছিল সেই রাত্রিটি| নিশ্চিতভাবে আমরাও যাকোবের সাথে বলতে পারি, ‘‘এ কেমন ভয়াবহ স্থান’’ (আদিপুস্তক 28:17)| গেৎশিমানীর উপরে ধ্যান করতে করতে, আমরা খ্রীষ্টের মর্ম্মবেদনার কথা চিন্তা করব, এবং আমি সেই বাগানে তাঁর দুঃখের বিষয়ে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব|

I. প্রথমত, গেৎশিমানীতে তাঁর যন্ত্রনা এবং মর্ম্মবেদনার কারণ কি ছিল ?

শাস্ত্র আমাদের বলছে যে যীশু ‘‘ব্যাথার পাত্র, ও যাতনা পরিচিত হইলেন’’ (যিশাইয় 53:3), কিন্তু তাঁর মধ্যে কোন হতাশাব্যঞ্জক ব্যক্তিত্ব ছিল না| তাঁর নিজের মধ্যে এমন এক মহা শান্তি বিরাজ করছিল যে তিনি বলতে পেরেছিলেন ‘‘আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি’’ (যোহন 14:27)| আমি মনে করি না যে আমার কোন ভুল হচ্ছে যখন আমি বলছি যে যীশু একজন শান্তিপূর্ণ, সুখী মানুষ ছিলেন|

কিন্তু গেৎশিমানীতে সমস্ত কিছুই বদলে গিয়েছিল| তাঁর শান্তি চলে গেল| তাঁর আনন্দ মথিত দুঃখে পরিণত হল| সেই খাড়া পাহাড়ের পাশের ঢালু রাস্তা, যেটা যিরূশালেম থেকে কিদ্রোন স্রোত পার হয়ে চলে যাচ্ছে, গেৎশিমানীর দিকে, তা বেয়ে নিচে নেমে আসার সময়ে সেই পরিত্রাতা প্রার্থনা করছিলেন এবং উৎফুল্লভাবে কথা বলছিলেন (যোহন 15-17)|

‘‘এই সমস্ত কথা বলিয়া, যীশু আপন শিষ্যগণের সহিত বাহির হইয়া কিদ্রোন স্রোত পার হইলেন, সেখানে এক উদ্যান ছিল, তাহার মধ্যে তিনি ও তাঁহার শিষ্যগণ, প্রবেশ করিলেন’’ (যোহন 18:1)|

তাঁর সমস্ত জীবনকালের মধ্যে তাঁর দুঃখ বা হতাশা অনুভব করার বিষয়ে যীশু খুব কমই বলেছিলেন| কিন্তু এখন, এই বাগানের প্রবেশ করে, সব কিছুই পরিবর্তিত হল| তিনি কেঁদে উঠলেন, ‘‘যদি হইতে পারে, এই পানপাত্র আমার নিকট হইতে দূরে যাউক’’ (মথি 26:39)| তাঁর সমগ্র জীবনকালে, যীশু খুব কমই তাঁর দুঃখ এবং হতাশা প্রকাশ করে কোন কথা উচ্চারণ করেছিলেন, তবুও এখানে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন, রক্ত ঘাম হয়ে ঝরছিল, এবং তিনি বলছিলেন, ‘‘আমার প্রাণ, মরণ পর্য্যন্ত দু:খার্ত্ত হইয়াছে’’ (মথি 26:38)| প্রভু যীশু, আপনার কি এমন ভুল হয়েছে, যাতে আপনার এমন গভীরভাবে যন্ত্রণা পাওয়া উচিৎ?

এটা স্পষ্ট যে তাঁর শারীরিক যন্ত্রনা এই দুঃখ এবং হতাশার কারণ ছিল না| যীশু এর আগে কখনও নিজের শারীরিক সমস্যার কোনরকম অভিযোগ করেননি| তিনি দুঃখার্ত্ত হয়েছিলেন যখন তাঁর বন্ধু লাসার মারা গিয়েছিলেন| সন্দেহাতীতভাবে তিনি দুঃখ অনুভব করেছিলেন যখন তাঁর শত্রুরা বলেছিলেন যে তিনি হলেন মদ্যপানে অভ্যস্ত এক ব্যক্তি, এবং যখন তারা তাঁকে শয়তানের ক্ষমতার দ্বারা দিয়াবল তাড়ানোর দোষে অভিযুক্ত করেছিলেন| কিন্তু সেই সবকিছুর মধ্যেও তিনি সাহসী হয়ে থেকেছিলেন এবং সমস্ত অতিক্রম করে এসেছিলেন| এই সবই তাঁর পিছনে পড়ে ছিল| সেখানে নিশ্চয়ই যন্ত্রনার তুলনায় বেশি ধারালো, তীব্র নিন্দার তুলনায় বেশি মর্মান্তিক, প্রিয়জন বিয়োগের তুলনায় বেশি ভীতিকারক কিছু একটা ছিল, যা তখন সেই সময়ে পরিত্রাতাকে আঁকড়িয়ে ধরেছিল, এবং তাঁকে ‘‘আরো দুঃখার্ত্ত এবং ব্যাকুল করে তুলেছিল’’ (মথি 26:37)|

আপনি কি মনে করেন যে এটা ছিল মৃত্যুজনিত ভয়, এবং ক্রুশারোপিত হওয়ার আতঙ্ক? অনেক দেশপ্রেমী নিজেদের বিশ্বাস রক্ষা করার জন্যে সাহসিকতার সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছিলেন| খ্রীষ্টের পক্ষে অসম্মানজনক হবে এটা ভেবে নেওয়া যে তাদের থেকে তাঁর কম সাহস ছিল| আমাদের প্রভুকে অবশ্যই এইরকম ভেবে নেওয়া যায় না যে তিনি তাঁর সেই শহীদদের থেকে নিকৃষ্ট যারা তাঁকে মৃত্যু পর্য্যন্ত অনুসরণ করেছিলেন! তাছাড়া, বাইবেল বলছে, ‘‘তিনিই আমার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন...’’ (ইব্রীয় 12:2)| যীশুর তুলনায় অন্য কোন ব্যক্তি আরও বেশি করে মৃত্যুর যন্ত্রণা অগ্রাহ্য করতে পারত না| বাগানে তাঁর নিদারুণ যন্ত্রণার এটা কারণ হতে পারে না|

এছাড়া, আমি বিশ্বাস করি না যে গেৎশিমানীর মর্ম্মবেদনা শয়তান থেকে আগত অস্বাভাবিক আক্রমণের কারণে হয়েছিল| তাঁর সেবা কাজের শুরুতে, যখন তিনি প্রান্তরে ছিলেন তখন খ্রীষ্টকে দিয়াবলের সঙ্গে বিরোধিতা করতে হয়েছিল| তা সত্ত্বেও আমরা পড়ি না যে যীশু ‘‘নিদারুণ যন্ত্রণার’’ মধ্যে ছিলেন| সেই প্রান্তরস্থিত প্রলোভনের মধ্যে গেৎশিমানীর বাগানের রক্তাক্ত ঘামের মতন কোন কিছুই ছিল না| যখন স্বর্গদূতদের প্রভু শয়তানের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি প্রবল কান্না এবং অশ্রুজল সমেত, মাটিতে পড়ে গিয়ে পিতার কাছে প্রার্থনা জানাননি| এর সঙ্গে তুলনামূলকভাবে, শয়তানের সঙ্গে খ্রীষ্টের সংঘর্ষ ছিল অনেক সহজ| কিন্তু গেৎশিমানীতে তাঁর এই নিদারুণ যন্ত্রণা তাঁর আত্মাকে আহত করেছিল এবং তাঁকে প্রায় মেরেই ফেলেছিল|

তাহলে, তাঁর নিদারুণ যন্ত্রণার কারণ কি ছিল? সেটা হল ঈশ্বর যখন আমাদের কারণে তাঁকে যন্ত্রণার মধ্যে ফেলেছিলেন| সেটা এমন ছিল যে যীশুকে পিতার হাত থেকে একটা নির্দ্দিষ্ট পানপাত্র নিতে হয়েছিল| তিনি তাতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছিলেন| অতএব আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে সেটা শারীরিক যন্ত্রণার তুলনায় অনেক বেশি ভীতিকারক ছিল, সেহেতু তা থেকে তিনি সঙ্কুচিত হন নি| এটা তাঁর প্রতি লোকেদের ক্রুদ্ধ হওয়ার চাইতেও খারাপ ছিল - যা থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেননি| শয়তানীয় প্রলোভনের চাইতেও এটা বেশি ভীতিকারক ছিল - যা তিনি অতিক্রম করেছিলেন| এটা ছিল ধারনাতীতভাবে ভয়ানক, বিস্ময়করভাবে ভয়ঙ্কর একটা কিছু - যা পিতা ঈশ্বরের কাছ থেকে তাঁর কাছে এসেছিল|

যা তাঁর মর্ম্মবেদনা তৈরী করেছিল সেটা কি ছিল, সেই বিষয়ে এই বাক্যটি সমস্ত সন্দেহকে দূর করছে:

‘‘সদাপ্রভু আমাদের সকলকার অপরাধ তাঁহার উপরে বর্ত্তাইলেন’’ (যিশাইয় 53:6)|

তিনি এখন সেই অভিশাপ বহন করছেন যা পাপীদের উপরে বর্ত্তানোর কথা ছিল| পাপীদের পরিবর্তে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন এবং দুঃখভোগ করেছিলেন| সেটাই ছিল সেই নিদারুণ যন্ত্রণার রহস্য যা সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়| কোন মানুষের মন এই দুঃখভোগকে সম্পূর্ণভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না|

এই হলেন ঈশ্বর, এবং ঈশ্বর একাকী,
তাঁর মর্ম্মযন্ত্রণা সম্পূর্ণভাবে জানেন|
      (“Thine Unknown Sufferings” by Joseph Hart, 1712-1768) |

ঈশ্বরের মেষশাবক তাঁর দেহে মানবজাতির সমস্ত পাপ বহন করছেন, এবং আমাদের সমস্ত পাপের ভার তাঁর আত্মার উপরে স্থাপিত হয়েছে|

‘‘তিনি আমাদের পাপভার তুলিয়া লইয়া আপনি নিজ দেহে কাষ্ঠের উপরে বহন করিলেন, যেন আমরা, পাপের পক্ষে মরিয়া, ধার্ম্মিকতার পক্ষে জীবিত হই: তাঁহারই ক্ষত দ্বারা তোমরা আরোগ্যপ্রাপ্ত হইয়াছ’’ (১ম পিতর 2:24)|

আমি বিশ্বাস করি যে গেৎশিমানীতে আমাদের সমস্ত পাপ তিনি ‘‘আপনি নিজ দেহে’’ তুলে নিয়েছিলেন, এবং পরের দিন আমাদের সেই সমস্ত পাপ ক্রুশের উপরে বহন করেছিলেন|

সেখানে সেই বাগানে খ্রীষ্ট সম্পূর্ণভাবে অনুভব করেছিলেন যে পাপের বাহক হতে কেমন লাগে| ইস্রায়েলের সমস্ত পাপ তাঁর মাথায় বহন করে, তিনি সেই বলির পাঁঠায় পরিণত হয়েছিলেন, যাকে টেনে নিয়ে যেতে হবে এবং যার উপরে পাপ উৎসর্গ করে দিয়ে, শিবিরের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে এবং ঈশ্বরের ক্রোধের আগুনে একদম ক্ষয়প্রাপ্ত করানো যাবে| এখন আপনি দেখতে পাচ্ছেন কি যে কেন খ্রীষ্ট এর থেকে পশ্চাদপসরণ করেছিলেন? আমাদের মতন পাপীদের দাঁড়ানোর পরিবর্তে ঈশ্বরের সামনে দাঁড়ানো খ্রীষ্টের পক্ষে খুব বিপদসংকেতপূর্ণ একটা বিষয় ছিল - যেমন লুথার বলেছিলেন যে ঈশ্বর দ্বারা তিনি দৃষ্ট হয়েছিলেন এমনভাবে, যেন তিনিই জগতের সমস্ত পাপী ছিলেন| তিনি এখন ঈশ্বরের সমস্ত ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন| তিনি নিজের উপরে বহন করছিলেন সেই বিচার যা পাপী মানুষদের উপরে বর্ষিত হওয়া উচিৎ ছিল| এই অবস্থানে থাকাটা নিশ্চয়ই খ্রীষ্টের পক্ষে বড় ভয়ানক ছিল|

এছাড়া, তখন সেই বাগানে, তার উপরে পাপের দন্ড নেমে আসা শুরু হয়ে গেছিল| প্রথমে, তাঁর উপরে সেই পাপ বর্ষিত হয়েছিল, এবং তারপরে সেই পাপের দন্ড| সেটা খুব অল্প দুঃখভোগ ছিল না যা শোধ করেছিল ঈশ্বরের ন্যায় বিচার মানুষের পাপের জন্যে| আমি অতিরঞ্জিত করতে কখনো ভয় পাই না যখন সেটা হয় আমাদের প্রভুর ধৈর্য্য| সমস্ত নরক সেই পেয়ালার মধ্যে ঢেলে দেওয়া হয়েছিল যা তিনি পান করেছিলেন|

সেই দুর্দশা যা পরিত্রাতার উপরে ভেঙ্গে পড়েছিল, সেই বিশাল এবং অবর্ণনীয় শারীরিক যন্ত্রনার অতল সমুদ্র যা পরিত্রাতার বলিদানজনিত মৃত্যুর সময়ে তাঁর আত্মায় আঘাত করেছিল, তা এতটাই ধারনাতীত যে আমার অবশ্যই আর বেশিদূর অগ্রসর হওয়া উচিৎ হবে না, নয়তো ব্যাখ্যাতীত কোন বিষয়কে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করার জন্যে কেউ কেউ আমাকে দোষারোপ করবেন| কিন্তু আমি এটা বলবো যে, মানব জাতির গভীর পাপ, প্রচন্ড ঝড়ের সঙ্গে আগত বিন্দু বিন্দু জলের মতন, খ্রীষ্টের উপরে পড়েছিল এবং রক্তাত ঘাম তাঁকে ব্যাপ্তাইজিত করেছিল| একজন পাপী হিসাবে ধার্য হতে, একজন পাপী হিসাবে শাস্তিগ্রহণ করতে, যদিও তিনি কখনও পাপ করেননি - এটাই ছিল তাঁর মর্ম্মবেদনার কারণ যা আমাদের পাঠ্যাংশে বলা হয়|

‘‘পরে তিনি মর্ম্মভেদী দুঃখে মগ্ন হইয়া আরও একাগ্র ভাবে প্রার্থনা করিলেন:আর তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল’’ (লূক 22:44)|

এখন আমি পরের প্রশ্নটিতে আসছি|

II. দ্বিতীয়ত, খ্রীষ্টের রক্তাত ঘর্ম্মের অর্থ কি ?

এলিকট আমাদের বলছেন যে রক্তাত ঘামের বাস্তবতা হচ্ছে ‘‘সাধারনভাবে স্বীকৃত দৃশ্য’’ (Charles John Ellicott, Commentary on the Whole Bible, volume VI, p. 351)| তিনি আরও নির্দেশ করেছেন যে ‘‘যথার্থ পরিভাষা অনুযায়ী ‘রক্তাত ঘর্ম্ম,’ [ছিল] এরিস্টটলের টিকা অনুসারে প্রচন্ড শ্রান্তির লক্ষণ’’ (ibid.)| অগাষ্টাইনের সময় থেকে বর্তমান কাল অবধি বেশির ভাগ বর্ণনাকারী উপস্থাপিত করছেন যে ‘‘আর ইহা যেন’’ এই শব্দটি চিহ্নিত করছে যে এটা প্রকৃতপক্ষেই ছিল আক্ষরিক রক্ত| আমরাও বিশ্বাস করি যে খ্রীষ্ট প্রকৃতপক্ষে রক্তাত ঘাম নিঃসরন করেছিলেন| যদিও এটা খুব সাধারন ব্যাপার নয়, তবুও ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য লোকেরা এর সাক্ষী হয়েছেন| গ্যালেনের প্রাচীন ওষুধের বইতে, এবং আরও সাম্প্রতিক কিছু তথ্যে, কিছু লোকদের কথা নথিভূক্ত করা আছে দীর্ঘ দূর্বলতার পরে যাদের রক্ত ঘাম ঝরেছিল|

কিন্তু খ্রীষ্টের ক্ষেত্রে রক্ত ঘাম ঝরানো ছিল অনুপম| তিনি শুধু রক্ত ঘাম ঝরিয়েছিলেন তা নয়, কিন্তু সেগুলি ছিল বড় বড় ফোঁটা অথবা ‘‘ঘনীভূত রক্ত,’’ বড়, ভারী ফোঁটা| আর কোন ক্ষেত্রে এইরকম দেখা যায় নি| অসুস্থ লোকদের ঘামের সঙ্গে কিছু রক্ত বেরিয়ে এসেছে, কিন্তু কখনো বড় ফোঁটায় বের হয়নি| তখন আমাদের বলা হয়েছিল যে এই সমস্ত বড় ঘনীভূত রক্তবিন্দুগুলি তাঁর পোষাকের মধ্যে দিয়ে চুঁইয়ে পড়েনি, কিন্তু সেগুলি ‘‘ভূমিতে পড়িতেছিল|’’ এখানে খ্রীষ্ট চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে একাই দাঁড়িয়ে আছেন| তিনি হচ্ছেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, প্রায় তেত্রিশ বছর বয়সের একজন মানুষ| কিন্তু তাঁর পাপের ভার থেকে উৎপন্ন সেই মানসিক চাপ, তাঁর সমস্ত শক্তিকে নিষ্পেষিত করা সেই চাপ, তাঁর দেহে অস্বাভাবিক উত্তেজনা সৃষ্টি করার জন্যে এমনভাবে বল প্রয়োগ করেছিল যে তাঁর সমস্ত লোমকূপগুলি খুলে গিয়েছিল এবং রক্তের বড় বড় ফোঁটা বের হয়ে এসেছিল আর মাটিতে পড়েছিল| এই ঘটনা দেখাচ্ছে যে সেই পাপের কত বড় বিশাল বোঝা তাঁর উপরে চাপানো হয়েছিল| এটা পরিত্রাতাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করছিল যতক্ষণ না তিনি গায়ের চামড়া থেকে রক্তমোক্ষণ করেছিলেন|

এটা খ্রীষ্টের দুঃখভোগের স্বেচ্ছাকৃত স্বভাবের এক উদাহরন স্থাপন করেছে, যেহেতু একটি ছুরির প্রয়োগ ছাড়াই সেখানে মুক্তভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়েছে| চিকিৎসকেরা আমাদের বলছেন যে বেশির ভাগ মানুষই যখন অত্যন্ত আতঙ্কিত অবস্থা ভোগ করেন, তখন রক্ত তীব্রবেগে তাদের হৃদপিন্ডের দিকে ধাবিত হয়| তাদের গাল ফ্যাকাশে হয়ে যায়; একটা সংজ্ঞাহীন অবস্থা চলে আসে; রক্ত ভিতরের দিকে চলে যায়| কিন্তু তাঁর মর্ম্মবেদনার মধ্যে থাকা আমাদের পরিত্রাতাকে দেখুন| তিনি স্বয়ং নিজেকে এত বেশি ভুলে গেছেন যে তাঁর রক্ত, তাঁকে পুষ্টিদান করার জন্যে ভিতরে যাওয়ার পরিবর্তে, মাটিতে পড়ার জন্য বাইরের দিকে চালিত হয়েছে| মাটির মধ্যে তাঁর রক্তের এই প্রবাহন পরিত্রাণের পূর্ণতার এক প্রতীক হিসাবে আপনার প্রতি অবাধে প্রদান করা হয়েছে| যেমনভাবে রক্ত তাঁর দেহের চামড়া থেকে অবাধে বের হয়ে এসেছিল, আপনি যখন যীশুকে বিশ্বাস করেন তখন তেমনভাবেই তাঁর রক্তের দ্বারা আপনি অবাধে আপনার পাপ থেকে শুচি হতে পারেন|

‘‘পরে তিনি মর্ম্মভেদী দুঃখে মগ্ন হইয়া আরও একাগ্র ভাবে প্রার্থনা করিলেন:আর তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল’’ (লূক 22:44)|

তাঁর আত্মার মধ্যস্থিত দুঃখের কারণে সেই রক্ত ঘাম নিঃসৃত হয়েছিল| হৃদয়ের বেদনা হল সকলের চাইতে নিকৃষ্ট বেদনা| দুঃখ এবং হতাশা হল অন্ধকারতম দুঃখ| গভীর হতাশা কি জিনিষ সেটা যারা অনুভব করেছেন তারাই আপনাকে বলতে পারবেন যে এটা সত্যি| মথিতে আমরা পড়ছি যে তিনি ছিলেন ‘‘দুঃখার্ত্ত এবং অত্যন্ত ব্যাকুল’’ (মথি 26:37)| ‘‘অত্যন্ত ব্যাকুল’’ - এই অভিব্যক্তিটি খুবই অর্থপূর্ণ| এটা একটা মনের বর্ণনা দিচ্ছে যা সম্পূর্ণভাবে দুঃখের দ্বারা অধিকৃত হয়ে আছে, অন্য সমস্ত চিন্তা বর্জিতভাবে| আমাদের পাপ বহনকারী হিসাবে তাঁর অবস্থান অন্যান্য সমস্ত চিন্তা ভাবনা থেকে তাঁর মনকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছিল| তাঁকে মানসিক যন্ত্রণার এক শক্তিশালী সমুদ্রের মধ্যে সামনে ও পিছনে ঝাঁকুনি দেওয়া হচ্ছিল| ‘‘আমরা মনে করিলাম তিনি আহত, ঈশ্বর কর্তৃক প্রহারিত, ও দুঃখার্ত্ত’’ (যিশাইয় 53:4)| ‘‘তিনি আপন প্রাণের শ্রমফল দেখিবেন, তৃপ্ত হইবেন’’ (যিশাইয় 53:11)| তাঁর হৃদয় তাঁকে অকৃতকার্য্য করেছিল| তিনি আতঙ্ক এবং পরম বিতৃষ্ণায় পরিপূর্ণ হয়েছিলেন| তিনি ছিলেন ‘‘অত্যন্ত ব্যাকুল|’’ পন্ডিত থমাস গডউইন বলেছিলেন, ‘‘সেই শব্দটি চিহ্নিত করিতেছে একটি ব্যর্থতা, অসম্পূর্ণতা, এবং আত্মার অবনতি, যেমন অসুস্থ এবং অবসন্ন মনুষ্যের ক্ষেত্রে ঘটিয়া থাকে|’’ যা তাঁকে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল, সেই ইপাফ্রোদিত অসুস্থতাকে একই শব্দের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল| কাজেই, আমরা দেখছি যে খ্রীষ্টের আত্মা অসুস্থ এবং অবসন্ন হয়ে পড়েছিল| নিদারুণ শ্রান্তির কারণে তাঁর ঘাম উৎপন্ন হয়েছিল| মৃত্যুপথযাত্রীর ঠান্ডা, আঠালো ঘাম তাদের দেহের দূর্বলতা থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে| কিন্তু যীশুর রক্তাত ঘাম উৎপন্ন হয়েছিল আমাদের পাপের ভারের অধীনস্থ হয়ে, তাঁর আত্মার অভ্যন্তরীন মৃত্যুর কারণে| তিনি তাঁর সমস্ত দেহ নিঃসৃত ক্রন্দনরত রক্তের সঙ্গে, এক ভয়াবহ সংজ্ঞাহীন-প্রাণের মধ্যে ছিলেন, এবং একটি অভ্যন্তরীন মৃত্যু ভোগ করেছিলেন| তিনি ছিলেন ‘‘অত্যন্ত ব্যাকুল|’’

মার্কের সুসমাচার আমাদের বলছে যে তিনি ছিলেন ‘‘অত্যন্ত বিস্ময়াপন্ন’’ (মার্ক 14:33)| এই গ্রীক শব্দটির অর্থ হল যে তাঁর বিস্ময় একটি চূড়ান্ত আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল, যেমন লোকদের হয়ে থাকে যখন তাদের চুল খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায় এবং মাংসপেশি কম্পিত হতে থাকে| সেই ব্যবস্থা প্রদান মোশিকে ভয়ে কম্পিত করেছিল; তেমনই আমাদের প্রভু আতঙ্কিত হয়েছিলেন সেই পাপ দর্শন করে যা তাঁর উপরে চাপানো হয়েছিল|

পরিত্রাতা প্রথমে দুঃখার্ত্ত হয়েছিলেন, পরে হতাশাগ্রস্ত এবং ব্যাকুল হয়েছিলেন, এবং সবশেষে হয়েছিলেন ‘‘অত্যন্ত বিস্ময়াপন্ন|’’ তিনি কম্পমান বিস্ময়ে পরিপূর্ণ ছিলেন| যখন আসলেই আমাদের পাপের বোঝা বহন করার সময় এসেছিল, তিনি একদম বিস্মিত হয়েছিলেন এবং হতচকিত হয়ে ঈশ্বরের সামনে পাপীদের স্থানে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন| পাপীদের প্রতিনিধি হিসাবে ঈশ্বর তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন সেটা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন| ঈশ্বর দ্বারা তিনি পরিত্যক্ত হয়েছেন সেই কথা চিন্তা করে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন| এটা তাঁর পবিত্র, কোমল, প্রেমপূর্ণ স্বভাবকে টলিয়ে দিয়েছিল, এবং তিনি হয়ে পড়েছিলেন ‘‘অত্যন্ত বিস্ময়াপন্ন’’ এবং ‘‘অত্যন্ত ব্যাকুল|’’

আমাদের আরও বলা হয়েছিল যে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার প্রাণ, মরণ পর্যন্ত দুঃখার্ত্ত হইয়াছে’’ (মথি 26:38)| গ্রীক শব্দ ‘‘perlupose’’ বা পেরিলুপোসে’র অর্থ হলো দুঃখের দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়া| সাধারন দুঃখভোগে সেখানে সাধারনত নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যে কিছু ফাঁকফোকর থাকে, আশা প্রাপ্তির কিছু জায়গা থাকে| সমস্যায় পড়লে আমরা সাধারনত সেগুলি আবার স্মরণ করতে পারি যে তাদের ঘটনাটি হয়তো আরও মন্দ| কিন্তু যীশুর ঘটনাতে এর চাইতে খারাপ কোন কিছু কল্পনা করা যায় না, কারণ তিনি দাউদকে বলতে পেরেছিলেন, ‘‘মৃত্যুর রজ্জু আমাকে বেষ্টন করিল’’ (গীতসংহিতা 116:3)| ঈশ্বরের সমস্ত তরঙ্গ এবং কুন্ডলী তার উপর নেমে এসেছিল| তাঁর উপরে, তাঁর নিচে, তাঁর চারদিক ঘিরে, তাঁর বাইরে, তাঁর অন্তরে, সর্বত্র, সর্বত্রই ছিল নিদারুণ যন্ত্রণা এবং তাঁর সেই যন্ত্রণা আর দুঃখ থেকে মুক্তির কোন পথ সেখানে ছিল না| একটিও মর্ম্মবেদনা খ্রীষ্ট ব্যতীত পিতার কাছে যেতে পারেনি, এবং তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার প্রাণ দুঃখার্ত্ত,’’ দুঃখের দ্বারা পরিবেষ্টিত, ‘‘মরণ পর্যন্ত’’ - মৃত্যুর কিনারা পর্য্যন্ত!

তিনি গেৎশিমানীর বাগানে মারা যান নি, কিন্তু সেখানে তিনি এত কষ্ট পেয়েছিলেন যেন তিনি মারা যাচ্ছিলেন| তাঁর যন্ত্রণা এবং মর্ম্মবেদনা সোজাসুজি মৃত্যুর প্রান্ত অবধি গিয়েছিল - এবং তারপরে সাময়িক বিরতি দিয়েছিল|

আমি বিস্মিত হচ্ছি না যে এই ধরনের অন্তর্মূখী চাপ আমাদের প্রভুকে এমনভাবে ঘর্মাক্ত করেছিল যেন সেটা ছিল রক্তের বড় বড় ফোঁটা| মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে আমি যতটা পেরেছি স্বচ্ছতার সঙ্গে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছি|

এই হলেন ঈশ্বর, এবং ঈশ্বর একাকী,
তাঁর মর্ম্মযন্ত্রণা সম্পূর্ণভাবে জানেন|

‘‘পরে তিনি মর্ম্মভেদী দুঃখে মগ্ন হইয়া আরও একাগ্র ভাবে প্রার্থনা করিলেন:আর তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল’’ (লূক 22:44)|

III. তৃতীয়ত, খ্রীষ্ট কেন এই সমস্ত কিছুর মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন ?

আমি নিশ্চিত যে অনেক লোক আশ্চর্য্য হন এই ভেবে যে খ্রীষ্টকে কেন এই ধরনের মর্ম্মবেদনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল এবং রক্তবিন্দুর ঘাম ঝরাতে হয়েছিল| তারা হয়তো বলেন, ‘‘আমি জানি যে তিনি সেই সমস্ত কিছুর মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না যে কেন তাঁকে সেই ঐ সবের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল|’’ আমি আপনাদের ছয়টি কারণ নির্দেশ করবো যে কেন যীশুকে গেৎশিমানীর বাগানে এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল|

1. প্রথমত, তাঁর প্রকৃত মানবিকতাকে আমাদের দেখাতে| তাঁকে শুধু ঈশ্বর বলে ভেবে নেবেন না, যদিও তিনি ছিলেন ঐশ্বরিক, কিন্তু তাঁকে আপনার অতি নিকট আত্মীয় হিসাবে অনুভব করুন, আপনার অস্থির সঙ্গে অস্থির, মাংসের সঙ্গে মাংসের আত্মীয়তা| কেমন সম্পূর্ণভাবে তিনি আপনার সঙ্গে সমব্যাথী হতে পারেন! আপনার সমস্ত ভারের দ্বারা তিনি ভারগ্রস্ত হয়েছেন এবং আপনার সমস্ত যাতনার দ্বারা তিনি যাতনাগ্রস্ত হয়েছেন| আপনার সঙ্গে এমন কিছুই কখনো ঘটে না যা যীশু বুঝতে পারেন না| সেটাই হলো কারণ যে তিনি আপনার প্রলোভনের মধ্যেও আপনাকে বহন করে নিয়ে যেতে সক্ষম থাকেন| আপনার বন্ধু হিসাবে যীশুকে আঁকড়িয়ে ধরুন| তিনি আপনাকে আরাম দিবেন যা জীবনের সমস্ত সমস্যার মধ্যেও আপনাকে বহন করবে|

2. দ্বিতীয়ত, আমাদের একটি উদাহরন দেওয়ার জন্য| প্রেরিত পিতর বলেছিলেন, ‘‘কেননা খ্রীষ্ট তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর’’ (১ম পিতর 2:21)| আমি সম্পূর্ণভাবে সেই সব প্রচারকদের সঙ্গে সহমত হই না যারা আপনাকে বলেন যে একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসাবে আপনার জীবন যাপন সহজ হবে! প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, ‘‘আর যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারন করিতে ইচ্ছা করে সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে’’ (২য় তীমথিয় 3:12)| তিনি বলেছিলেন, ‘‘তুমি খ্রীষ্ট যীশুর উত্তম যোদ্ধার মত, [আমার] সহিত ক্লেশভোগ স্বীকার কর’’ (২য় তীমথিয় 2:3)| পৌল একজন যুবক প্রচারকের প্রতি এই বাক্যগুলি বলেছিলেন| সেবার কাজ একটা খুব কঠিন কাজ| বেশির ভাগ মানুষ এটা করতে পারে না| জর্জ বার্ণার কথা অনুসারে, বর্তমানে পালকদের মধ্যে শতকরা 35 থেকে 40 ভাগ পালক মন্ডলী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন| এটা হচ্ছে জগতের কঠিনতম আহ্বানগুলির মধ্যে একটি| কোন মানুষ এটা সহ্য করতে পারে না যদি না তিনি খ্রীষ্টের যোদ্ধা হন! শুধুমাত্র পালকরাই নন, কিন্তু সমস্ত ভাল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের সেবা করার জন্যে দুঃখের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন| বাইবেল বলছে, ‘‘অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে’’ (প্রেরিত 14:22)| আমি মনে করি যে ইনি ছিলেন ডঃ জন্ সাং যিনি বলেছিলেন, ‘‘ক্রুশ ছাড়া - মুকুট নাই|’’

3. তৃতীয়ত, বাগানে তাঁর অভিজ্ঞতা পাপের মন্দতা প্রদর্শন করছে| আপনি হলেন একজন পাপী, যা যীশু কখনও ছিলেন না| হে পাপী, আপনার পাপ অবশ্যই ভয়ঙ্কর এক জিনিষ যেহেতু সেটা খ্রীষ্টের মধ্যে এমন যন্ত্রণা সৃষ্টি করেছিল| আমাদের আরোপিত পাপ তাঁকে রক্ত ঘাম ঝরাতে বাধ্য করেছিল|

4. চতুর্থত, সেই বাগানের মধ্যে তাঁর পরীক্ষার সময়টি আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রদর্শন করছে| আমাদের পরিবর্তে তিনি পাপী হিসাবে পরিগণিত হয়ে পরম বিতৃষ্ণা বহন করেছিলেন| আমাদের পাপের দেনা শোধ করার জন্যে, আমাদের পরিবর্তে তিনি দুঃখভোগ করাতে আমরা তাঁর কাছে সমস্ত বিষয়ে ঋণী হয়েছি| আমাদের প্রতি তাঁর এই গভীর ভালবাসার জন্যে আমাদের উচিৎ তাঁকে খুব বেশি করে ভালবাসা|

5. পঞ্চমত, বাগানে যীশুর দিকে দেখুন এবং তাঁর বলিদানের মাহাত্ম্য অনুভব করুন| ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমি কত বিবর্ণ, কত মলিন| আমি অনুভব করছি যে আমি একমাত্র নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার যোগ্য| আমি আশ্চর্যান্বিত হই যে ঈশ্বর আরও অনেক আগেই আমাকে নিক্ষেপ করেননি| কিন্তু আমি গেৎশিমানীর বাগানে যাই, এবং সেই জলপাই গাছগুলির তলায় দেখি, এবং আমি আমার পরিত্রাতাকে দেখতে পাই| হ্যাঁ, আমি দেখি যে নিদারুণ যন্ত্রণায় তিনি মাটীতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন, এবং আমি শুনতে পাই তিনি আর্তনাদ করছেন| আমি তাঁর চতুর্দিকের মাটির দিকে তাকাই এবং দেখি সেটা তাঁর রক্তে লাল হয়ে গেছে, যেখানে তাঁর মুখমন্ডলে রয়েছে জমাট বাঁধা রক্তাত ঘামের প্রলেপ| আমি তাঁকে বলি, ‘‘পরিত্রাতা, আপনার কি কোন সমস্যা হইয়াছে?’’ আমি তাঁকে উত্তর করতে শুনি, ‘‘আমি আপনার পাপের জন্যে দুঃখভোগ করিতেছি|’’ এবং আমি অনুভব করি যে আমার জন্যে তাঁর উৎসর্গের মাধ্যমে ঈশ্বর আমার পাপের ক্ষমা প্রদান করতে পারেন| যীশুর কাছে আসুন এবং তাঁর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করুন| তাঁর রক্তের দ্বারা আপনার পাপের ক্ষমা হবে|

6. ষষ্ঠত, চিন্তা করুন শাস্তির সেই আতঙ্ককে যা তাদের উপরেই নেমে আসবে যারা তাঁর প্রায়শ্চিত্তমূলক রক্তকে প্রত্যাখ্যান করে| চিন্তা করুন যে আপনি যদি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন তাহলে একদিন আপনাকে এক পবিত্র ঈশ্বরের সামনে দাঁড়াতে হবে এবং আপনার পাপের জন্যে বিচারিত হতে হবে| আমার হৃদয়ের যন্ত্রণার সঙ্গে, আমি আপনাকে বলব যে, আপনার কি হবে যদি আপনি পরিত্রাতা, সেই খ্রীষ্টকে অস্বীকার করেন| কোন একটি বাগানে নয়, কিন্তু একটি শয্যায়, আপনি বিস্মিত হবেন এবং মৃত্যুকে অতিক্রম করবেন| আপনি মারা যাবেন এবং আপনার আত্মাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে বিচারিত হওয়ার জন্য এবং নরকে নিক্ষেপ করা হবে| গেৎশিমানী আপনাকে সতর্ক করুক| এর আর্তনাদ এবং অশ্রুজল এবং রক্তাত ঘর্ম্ম আপনাকে পাপের অনুশোচনায় এবং যীশুর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করতে পরিচালিত করুক| তাঁর কাছে আসুন| তাঁকে বিশ্বাস করুন| তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং জীবিত আছেন, স্বর্গে ঈশ্বরের ডানদিকে বসে আছেন| এখনই তাঁর কাছে আসুন এবং খুব দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই, ক্ষমাপ্রাপ্ত হন| আমেন|


যদি এই প্রচার আপনাকে আশীর্বাদ দান করেছে তাহলে ডঃ হাইমার্স আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চান| যখন আপনি ডঃ হাইমার্সকে চিঠি লিখবেন তখন অবশ্যই তাকে জানাবেন যে কোন দেশ থেকে আপনি তাকে লিখছেন নয়ত তিনি আপনার ই-মেলের জবাব দিতে সক্ষম হবেন না| যদি এই প্রচার আপনাকে আশীর্বাদ দান করেছে তবে ডঃ হাইমার্সকে একট ই-মেল পাঠান এবং তাকে সেইকথা জানান, কিন্তু কোন দেশ থেকে আপনি লিখছেন চিঠিতে সেটা অবশ্যই অন্তর্ভূক্ত করবেন| ডঃ হাইমার্সের ই-মেল ঠিকানা হল rlhymersjr@sbcglobal.net (এখানে ক্লিক করুন) | আপনি যে কোন ভাষায় ডঃ হাইমার্সকে চিঠি লিখতে পারেন, কিন্তু যদি পারেন তো ইংরাজিতেই লিখুন| যদি আপনি ডঃ হাইমার্সকে ডাক-ব্যবস্থার মাধ্যমে চিঠি পাঠাতে চান, তবে তার ঠিকানা হল P.O. Box 15308, Los Angeles, CA 90015 | আপনি তাকে (818)352-0452 নম্বরে ফোন করতে পারেন|

(সংবাদের পরিসমাপ্তি)
ডঃ হাইমার্সের সংবাদ আপনি প্রতি সপ্তাহে ইন্টারনেটে www.sermonsfortheworld.com ওয়েবসাইটে গিয়ে পড়তে পারেন| ক্লিক করুন “প্রচার পান্ডুলিপি|”

আপনি ডাঃ হাইমার্সকে মেইল পাঠাতে পারেন rlhymersjr@sbcglobal.net - আপনি
তাকে পত্র লিখতে পারেন P.O. Box 15308, Los Angeles, C A 90015.এই ঠিকানায়
। আপনি তাকে টেলিফোন করতে পারেন (818) 352-0452.

এই সুসমাচারের ম্যানুস্ক্রিপ্ট এর ওপর ডাঃ হাইমসের কোন কপিরাইট নেই। আপনারা
ইহা ব্যাবহার করতে পারেন ডাঃ হাইমসের অনুমতি ছাড়াই। অবশ্য, ভিডিও মেসেজ
সবই কপিরাইটের সহিত আছে এবং কেবলমাত্র তার অনুমতি নিয়েই ব্যাবহার করা যাবে।

সংবাদের আগে শাস্ত্রাংশ পাঠ করেছেন মিঃ আবেল প্রুধোম্মে: লূক 22:39-44 |
সংবাদের আগে একক সংগীত পরিবেশন করেছেন মিঃ বেঞ্জামিন কিনকেড গ্রিফিত:
“Thine Unknown Sufferings” (Joseph Hart, 1712-1768) |


খসড়া চিত্র

রক্তাত ঘর্ম্ম

THE BLOODY SWEAT

লেখক : ডঃ আর. এল. হাইমার্স, জুনিয়র|

‘‘আরও একাগ্রভাবে প্রার্থনা করিলেন: আর তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘণীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল’’ (লূক 22:44)|

(যোহন 18:2; যিশাইয় 53:7; আদিপুস্তক 28:17)

I.   প্রথমত, গেৎশিমানীতে তাঁর যন্ত্রনা এবং মর্ম্মবেদনার কারণ কি ছিল?
যিশাইয় 53:3; যোহন 14:27; 18:1; মথি 26:39, 38, 37;
ইব্রীয় 12:2; যিশাইয় 53:6; ১ম পিতর 2:24; লূক 22:44 |

II.  দ্বিতীয়ত, খ্রীষ্টের রক্তাত ঘর্ম্মের অর্থ কি?
লূক 22:44; মথি 26:37; যিশাইয় 53:4, 11; মার্ক 14:33; মথি 26:38;
গীতসংহিতা 116:3; লূক 22:44 |

III.  তৃতীয়ত, খ্রীষ্ট কেন এই সমস্ত কিছুর মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন?
১ম পিতর 2:21; ২য় তীমথিয় 3:12; 2:3; প্রেরিত 14:22 |