Print Sermon

এই ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য হল ধর্ম্মোপদেশের পান্ডুলিপি এবং ধর্ম্মোপদেশের ভিডিওগুলি বিশ্বব্যাপী পালক ও মিশনারিদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে, যেখানে ধর্ম্মতত্ত্বমূলক সেমিনারী বা বাইবেল স্কুল থাকলেও খুব কম রয়েছে|

এই সমস্ত ধর্ম্মোপদেশের পান্ডুলিপি ও ভিডিওগুলি www.sermonsfortheworld.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এখন প্রতি বছর 221টি দেশের প্রায় 1,500,000 কম্প্যুটারে যায়| আরও শত শত লোক ইউটিউবের ভিডিওর মাধ্যমে এগুলি দেখেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তারা ইউটিউব ছেড়ে বেরিয়ে যান এবং আমাদের ওয়েবসাইটে চলে আসেন| ইউটিউব আমাদের ওয়েবসাইটে লোক এনে দেয়| ধর্ম্মোপদেশের পান্ডুলিপিগুলি প্রতি মাসে 46টি ভাষায় প্রায় 120,000 কম্প্যুটারে প্রচারিত হয়| ধর্ম্মোপদেশের পান্ডুলিপিগুলি গ্রন্থসত্ত্ব দ্বারা সংরক্ষিত নয়, কাজেই প্রচারকগণ আমাদের অনুমতি ছাড়াই এইগুলি ব্যবহার করতে পারেন| মুসলিম এবং হিন্দু রাষ্ট্রসমেত, সমগ্র পৃথিবীতে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার এই মহান কাজে সাহায্য করার জন্য কিভাবে আপনি একটি মাসিক অনুদান প্রদান করতে পারেন তা জানতে অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন|

যখনই আপনি ডঃ হেইমার্‌সকে লিখবেন সর্বদা তাকে জানাবেন যে আপনি কোন দেশে বাস করেন, অথবা তিনি আপনাকে উত্তর দিতে পারবেন না| ডঃ হেইমার্‌সের ই-মেল ঠিকানা হল rlhymersjr@sbcglobal.net |




চীন কিভাবে পৃথিবীর এক ক্ষমতায় পরিণত হল !

(আদিপুস্তকের উপরে #88 নং প্রচার)
HOW CHINA BECAME A WORLD POWER!
(SERMON #88 ON THE BOOK OF GENESIS)
(Bengali)

লেখক : ডঃ সি. এল. কেগান
by Dr. C. L. Cagan

2016 সালের, 7ই ফেব্রুয়ারী, প্রভুর দিনের সকালবেলায় লস্ এঞ্জেল্সের
ব্যাপটিষ্ট ট্যাবারন্যাক্ল মন্ডলীতে এই ধর্ম্মোপদেশটি প্রচারিত হয়েছিল
A sermon preached at the Baptist Tabernacle of Los Angeles
Lord’s Day Morning, February 7, 2016

‘‘পরে ঈশ্বর নোহকে ও তাহার পুত্রগণকে, এই আশীর্ব্বাদ করিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত, ও বহুবংশ হও, পৃথিবী পরিপূর্ণ কর’’ (আদিপুস্তক 9:1)|


আজকে আমাদের মন্ডলী চীনা নববর্ষ উদ্যাপন করছে| চীনা নববর্ষ হচ্ছে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ছুটির দিন| এটা শুরু হয়েছিল খ্রীষ্ট জন্মের দুই হাজার বছর আগে থেকে, যখন সম্রাট হুয়াং টি প্রথম বর্ষপঞ্জী প্রকাশ করেছিলেন| পাশ্চাত্যের বর্ষপঞ্জীর মতন, চীনা বর্ষপঞ্জীও প্রত্যেক বছর ধরে গণনা করে থাকে| কিন্তু পাশ্চাত্যের বর্ষপঞ্জীর মতন না হয়ে, চীনা বর্ষপঞ্জী চাঁদের আবর্তনের উপরে ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে| পাশ্চাত্যের বর্ষপঞ্জী সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর আবর্তনের উপরে ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে| পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে বছরে একবার প্রদক্ষিন করে, যা থেকে সব ঋতু উৎপন্ন হয়, যেমন গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত এবং বসন্ত ঋতু|

চীনা বর্ষপঞ্জী পৃথিবীর চারিদিকে চাঁদের পরিক্রমার উপরে ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে| চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে বছরে সঠিকভাবে বারো বার পরিক্রমা করে না| সেই কারণে প্রত্যেক বছর চীনা নববর্ষ বিভিন্ন তারিখে উদ্যাপিত হয়ে থাকে, যিহুদী ধর্মের নিস্তার পর্বের মতন, এবং খ্রীষ্ট ধর্মের ইস্টারের মতন| জানুয়ারির শেষ এবং ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে যে কোন দিনে চীনা নববর্ষের সূচনা হতে পারে| এই বছর চীনা নববর্ষ শুরু হচ্ছে আগামীকাল, 8ই ফেব্রুয়ারী থেকে| ঐতিহ্য অনুযায়ী বেশ কয়েকদিন ধরেই এই অনুষ্ঠান চলবে, এবং আজকে নববর্ষ উদ্যাপন করাটাই একেবারে যথার্থ|

একটা চন্দ্র-চক্র সম্পূর্ণ হতে সময় লাগে ষাট বছর এবং প্রতিটি বারো বছরের পাঁচটি চক্র দিয়ে সম্পূর্ণ চন্দ্র-চক্রটি প্রস্তুত হয়| চীনা বর্ষপঞ্জী এই বারটি বছরের প্রত্যেকটির নামকরণ করেছে কোন একটি স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ অথবা পাখির নাম দিয়ে - ইঁদুর, ষাঁড়, বাঘ, খরগোশ, ড্রাগন, সাপ, ঘোড়া, ভেড়া, বাঁদর, মোরগ, কুকুর, এবং শুয়োর| চলতি বছরটি (2016 A.D) হচ্ছে বাঁদরের বছর| এই ধরনের নববর্ষ উদ্যাপন করা হয় সেই সব দেশে যেগুলি প্রভাবিত হয়েছে চীনাদের দ্বারা, কোরিয়া, কাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের অন্তর্ভূক্তিসহ, সর্বত্র চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যে, এবং এমনকি জাপানেও 1873 সাল অবধি, যখন জাপানিরা পাশ্চাত্যের বর্ষপঞ্জী গ্রহণ করেছিল|

পৃথিবীর বিখ্যাত রাষ্ট্রগুলির মধ্যে চীন হচ্ছে একটি| অন্য যে কোন দেশের চাইতে চীনে অনেক বেশি লোক থাকে - প্রায় 1.4 বিলিয়ন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের লোকসংখ্যার চার গুণেরও বেশি| চীন এক বিশাল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে| আমেরিকা এবং পাশ্চাত্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে, চীন খুব শীঘ্রই পৃথিবীতে এক নেতৃস্থানীয় দেশ হতে পারে|

বাইবেলের ভাববানী বহু আগেই চীনদেশের মহান আত্মিক জাগরণের কথা বলেছিল| খ্রীষ্টের সাতশ বছর আগে যিশাইয় বলেছিলেন, ‘‘দেখ, ইহারা দূর হইতে আসিবে: আর, দেখ, উহারা উত্তর ও পশ্চিম দিক হইতে আসিবে; আর ঐ লোকেরা সীনীম দেশ হইতে আসিবে’’ (যিশাইয় 49:12)| চীনদেশে খ্রীষ্টধর্মের বিস্ফোরণের দ্বারা এই ভাববাণী সম্পূর্ণ হচ্ছে| চীনদেশে বর্তমানে প্রায় 130 মিলিয়ন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী বসবাস করছেন| ‘‘সীনীম’’ হচ্ছে চীনের প্রাচীন নাম| ডঃ হেনরি এম. মরিস এবং অন্য অনেক পন্ডিতেরা ‘‘সীনীম’’কে চীন হিসাবে শনাক্ত করেছেন (The Defender’s Study Bible; note on Isaiah 49:12)| সেই ভাববাণী আজকে পূর্ণ হতে চলেছে| আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এবং ইউরোপের চাইতে চীনে প্রত্যেক রবিবারের সকালে অনেক বেশি সংখ্যক লোক মন্ডলীতে যায় - একসঙ্গে! অনেক চীনা যুবক আমাদের মন্ডলীতে আসেন| তাদের মধ্যে কেউ কেউ খ্রীষ্টের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, এবং তাদের জন্যে আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি!

চীনদেশের এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে| পীত নদীর তীরে, খ্রীষ্টের দুই হাজার বছরের আগে শিয়া রাজবংশের আমলে, চীনদেশের সভ্যতা শুরু হয়েছিল| খ্রীষ্টের জন্মের 1,600 বছর আগে সাং রাজবংশের আমলে চীনা সভ্যতা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল|

নোহের প্লাবনের প্রায় দুশো বছর পরেও চীনদেশে লোকেরা বসবাস করত| সেই মহাপ্লাবনে ঈশ্বর মানবজাতির বিচার করেছিলেন| সমগ্র জগত জলে পরিপূর্ণ হয়েছিল| কেবলমাত্র নোহ ও তার পরিবার জাহাজের ভিতরে রক্ষা পেয়েছিলেন| তারপরে জল কমে গিয়েছিল| নোহ এবং তার পরিবারের সদস্যেরা জাহাজ থেকে বের হয়ে এসেছিলেন| অনুগ্রহ করে আপনার বাইবেলে আদিপুস্তক 9:1 পদটি দেখুন| এটা স্কোফিল্ড স্টাডি বাইবেলের 16 নং পাতায় আছে| ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন, ‘‘তোমরা প্রজাবন্ত, ও বহুবংশ হও, পৃথিবী পরিপূর্ণ কর’’ (আদিপুস্তক 9:1)|

কেউ হয়তো আশ্চর্য্য হতে পারেন যে, ‘‘এটা কি প্রকৃত সত্যি? এটা কি চীনা ইতিহাসের সঙ্গে খাপ খায়? কিভাবে দুই অথবা তিনশ বছরের মধ্যে আটজন মানুষ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে মিলিয়ন মানুষের মানবজাতিতে পরিণত হল - যাতে করে লোকে চীনদেশ, ভারতবর্ষ, মিশর, এবং অন্য আরও অনেক জায়গায় শহর বানিয়ে ফেলল?’’ আজ সকালে আমি এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই|

প্রথমত, সেই প্লাবনের আগে কি ঘটেছিল সেই বিষয়ে চিন্তা করুন| ছয় হাজার বছরেরও আগে, ঈশ্বর আমাদের প্রথম পিতামাতাকে বলেছিলেন, ‘‘প্রজাবন্ত, ও বহুবংশ হও, পৃথিবী পরিপূর্ণ কর’’ (আদিপুস্তক 1:28)| ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন সন্তানের জন্ম দাও এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ কর|

আদম এবং তার উত্তরপুরুষেরা পৃথিবী পূর্ণ করেছিলেন| তার আগে লোকেরা 800 থেকে 900 বছর অবধি বেঁচে থাকত| তখনকার পরিবেশ এখনকার চাইতে অনেক ভাল ছিল| পৃথিবী জলীয় বাস্পের ঘেরাটোপের দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল যা তাকে মহাকাশ থেকে আগত বিকিরণের হাত থেকে সুরক্ষা দিত| পৃথিবীতে তখন বৃষ্টি হত না| পরিবর্তে ‘‘পৃথিবী হইতে কুজ্ঝটিকা উঠিয়া, সমস্ত ভূতলকে জলসিক্ত করিল’’ (আদিপুস্তক 2:6)| এটা ছিল একটা গ্রীন হাউস বা কাঁচের তৈরী চারাঘরের মতন, বসবাসের পক্ষে অতি মনোরম স্থান| প্রচুর পরিমানে উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জন্ম হত| সেইরকম মানুষেরাও জন্মাত| 900 বছর বা তারও বেশি সময় তারা বেঁচে থাকত| বাইবেল বলছে, ‘‘সর্ব্বশুদ্ধ আদম নয়শত ত্রিশ বছর বাঁচিয়াছিলেন’’ (আদিপুস্তক 5:5)|

কিন্তু কিন্তু আদম পাপ করেছিলেন, এবং পাপ ও মৃত্যুকে মানবজাতির মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন| সেই কারণে আদমের প্রথম পুত্র কয়িন তার নিজের ভাই হেবলকে হত্যা করেছিল (আদিপুস্তক 4:8)| ঈশ্বর কয়িনকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি পৃথিবীতে পলাতক এবং ভ্রমণকারী হইবে’’ (আদিপুস্তক 4:12)| কয়িন বহুদূরে ‘‘এদনের পূর্ব্বদিকে, নোদ দেশে’’ (আদিপুস্তক 4:16) পালিয়ে গিয়েছিলেন| সেই ‘‘নোদ দেশ’’ আক্ষরিক অর্থেই ছিল ‘‘ভ্রাম্যমান দেশ|’’ ডঃ এম. আর. ডিহ্যান বলেছিলেন, ‘‘পুরুষপরম্পরায় প্রাপ্ত বর্ণনা বলছে যে কয়িন ভারতবর্ষ চীন এবং অন্যান্য বহুদূর দেশে চলে গিয়েছিলেন’’ (The Days of Noah, Zondervan, 1971, p. 33)| কয়িন তার পিতামাতার থেকে বহুদূরে একটি শহর স্থাপন করেছিলেন (আদিপুস্তক 4:17 পদটি দেখুন)|

কয়িন ছুটে পালিয়ে গিয়েছিলেন| হেবল মারা গিয়েছিল| আদম এবং হবার শেথ নামের আরও একটি পুত্র ছিল (আদিপুস্তক 4:25)| তাদের অনেক ‘‘পুত্র এবং কন্যা ছিল’’ (আদিপুস্তক 5:4)| তার 930 বছরের জীবনকালে, আদমের আরও অনেক সন্তানসন্ততি ছিল| যিহুদী ঐতিহ্য অনুযায়ী, আদম ও হবার 56টি সন্তান ছিল!

শেথ 912 বছর বেঁচেছিলেন| তার অনেক ‘‘পুত্র ও কন্যা’’ ছিল (আদিপুস্তক 5:7, 8)| শেথের পুত্র ইনোশ 905 বছর জীবিত ছিলেন| তার অনেক ‘‘পুত্র ও কন্যা ছিল’’ (আদিপুস্তক 5:10, 11)| ইনোশের পুত্র কৈনন 910 বছর বেঁচেছিলেন| তার অনেক ‘‘পুত্র ও কন্যা’’ ছিল (আদিপুস্তক 5:13, 14)| আদিপুস্তকের পঞ্চম অধ্যায়টিতে সেই সময়কালের সমস্ত মহান লোকদের নাম ও বয়স দেওয়া আছে| তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই 900 বছরের বেশি সময়কাল ধরে বসবাস করেছিলেন| তাদের অনেক সন্তানসন্ততি ছিল| মানবজাতি পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করেছিল|

প্লাবনের সময়ে সেখানে লক্ষ লক্ষ, এমনকি কোটি কোটি লোক ছিল| পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় অংশে তাদের ছড়িয়ে পড়তে হয়েছিল| সেটা প্লাবনের বিশ্বব্যাপী চরিত্রের সঙ্গে খাপ খেয়ে যাচ্ছে| সেই প্লাবন সমগ্র পৃথিবীকে আচ্ছাদিত করেছিল কারণ লোকেরা পৃথিবীকে আচ্ছাদিত করে রেখেছিল!

তারা পাপী হিসাবে পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করেছিল| ‘‘আর সদাপ্রভু দেখিলেন পৃথিবীতে মনুষ্যের দুষ্টতা বড়ই, এবং তাহার অন্তঃকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ’’ (আদিপুস্তক 6:5)| ‘‘তৎকালে পৃথিবী ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভ্রষ্ট, এবং পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ ছিল’’ (আদিপুস্তক 6:11)|

প্লাবনের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর মানবজাতির বিচার করেছিলেন| জল 150 দিনের জন্য পৃথিবীকে ঢেকে রেখেছিল (আদিপুস্তক 7:24)| কেবলমাত্র নোহ ও তার পরিবার - আটজন লোক - জাহাজের মধ্যে জীবিত ছিলেন| বাকিরা সকলেই জলে ডুবে গিয়েছিল এবং নরকে চলে গিয়েছিল| প্লাবনের জল তারপরে নেমে যায়| সেই জাহাজ আরমিনিয়ার, আরারট পর্বতের গায়ে ভিড়েছিল (আদিপুস্তক 8:4)| যখন নোহ ও তার পরিবার জাহাজ ছেড়ে বের হয়েছিলেন, তখন ঈশ্বর তাদেরকে বলেছিলেন, ‘‘প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, পৃথিবী পরিপূর্ণ কর’’ (আদিপুস্তক 9:1)|

এই একই আজ্ঞা ঈশ্বর আদম এবং হবাকে দিয়েছিলেন| এটা করা খুব সহজ ছিল| লোকেরা এখনও শতাব্দীকাল যাবৎ বেঁচে থাকেন - তবে প্লাবনের আগের মতন বহূ বছর যাবৎ নয়, যেহেতু সেই ঘেরাটোপের আচ্ছাদন সরে গেছে| কিন্তু এখনও কোন দম্পতির 20, 30 অথবা তার থেকেও বেশি সংখ্যক সন্তানসন্ততি থাকতে পারে|

উঠে দাঁড়ান এবং ‘‘প্রশংসা, আমার আত্মা, স্বর্গের রাজা’’ গানটি করুন|

প্রশংসা, আমার আত্মা, স্বর্গের রাজা, তাঁহার পদদ্বয় তাহার প্রশংসা নিয়ে আসে;
   বন্দিত্বমোচন, আরোগ্য, পুনরুদ্ধার, ক্ষমা, কে তাঁহার গান করা উচিৎ মনে করে?
তাঁহার প্রশংসা! তাঁহার প্রশংসা! অনন্তকালীন রাজার প্রশংসা|
   (“Praise, My Soul, the King of Heaven,” from Psalm 103;
      by Henry F. Lyte, 1793-1847)|

আপনারা বসতে পারেন|

পৃথিবী জুড়ে এটা ছড়িয়ে দেওয়াটা অনেক সহজ ছিল| প্লাবনের পরে আবহাওয়া আগের চেয়ে অনেকটাই শীতলতর ছিল| বিজ্ঞানীরা এই সময়কালকে বলেছেন ‘‘বরফ যুগ|’’ জলের বেশির ভাগটাই বরফের চাদরের মধ্যে আটকে ছিল| পর্বতগুলি মাথা চাড়া দিয়ে উপরে উঠে গিয়েছিল, এবং সমুদ্রের জলস্তর নীচে নেমে গিয়েছিল| এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকায় অতিক্রম করাটা সহজ হয়েছিল| রাশিয়া এবং আলাস্কার মাঝখানে জল কমে গিয়েছিল| রাশিয়া এবং আলাস্কার মাঝে স্থলভাগ দিয়ে তৈরী একটা সেতু হয়েছিল| বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে আলাস্কা থেকে দক্ষিণ আমেরিকার, স্বদেশজাত ‘‘ভারতীয়গণ’’ - চীনদেশের লোকেদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত|

দুশ অথবা তিনশ বছরের মধ্যে পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করাটা যে খুব সহজ কাজ ছিল তার আরও একটা কারণ আছে| লোকেরা ইতিমধ্যেই বিশ্বের ভূগোলটি জেনে ফেলেছিল| প্লাবনের আগেই তারা ভূমির গঠন-বিন্যাস সম্বন্ধে জানত| তাদের পূর্বপুরুষেরা ভারতবর্ষ এবং চীনদেশে বসবাস করেছিলেন| তারা কোথায় যাচ্ছে সেটা তারা জানতো!

পৃথিবীকে আবার পরিপূর্ণ করা সহজ হয়ে পড়বে| যতটা সময়ে এটা হওয়া উচিৎ ছিল তার চেয়ে এতে বেশি সময় লেগেছিল| এটা কেন হয়েছিল একটু পরেই আমি তা ব্যাখ্যা করব| কিন্তু যখন লোকেরা ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন তারা অনেকটা ভূমি পূর্ণ করেছিল এবং খুব দ্রুত সেটা করেছিল! নোহের সেই পুত্রেরা ছিলেন শেম, হাম ও যাফেৎ (আদিপুস্তক 10:1)| শেম পরিণত হয়েছিলেন, মধ্য প্রাচ্যের শেমেটিক লোকদের পূর্বপুরুষ| অব্রাহাম ছিলেন শেমের একজন উত্তরপুরুষ| তার পুত্র ইসহাকের মাধ্যমে, অব্রাহাম যিহুদীদের পিতা হয়েছিলেন| তার পুত্র ইসমাইলের মাধ্যমে, অব্রাহাম আরবীয়দের পিতা ছিলেন| যিহুদী এবং আরবীয় সকলেই হলেন শেমেটিক লোক|

যাফেৎ ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পূর্বপুরুষে পরিণত হয়েছিলেন| তার পুত্রদের মধ্যে একজন ছিলেন গোমর, যিনি পশ্চিম ইউরোপের অনেক জাতির পিতা হয়েছিলেন| আর এক পুত্র ছিলেন মাগোগ, যিনি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের বাসিন্দাদের পিতা হয়েছিলেন| যাফেতের এক পৌত্র তশীশ, স্পেনের লোকদের পূর্বপুরুষ ছিলেন| চীনের লোকেরা হচ্ছেন যাফেতের বংশধর|

হাম ছিলেন আফ্রিকার দেশগুলির, হামিটিক লোকদের পূর্বপুরুষ| খামের সন্তানদের মধ্যে একজন ছিলেন মিশর (আদিপুস্তক 10:6), ইব্রীয়তে যাকে বলা হয় ইজিপ্ট, আফ্রিকার সেই প্রথম দেশটি যেখানে লোকেরা আগে পৌঁছেছিল|

নোহের উত্তরপুরুষেরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করেছিল| কিন্তু তখন তখনই এটা ঘটেনি! সবার আগে তারা ঈশ্বরকে মান্য করতে অস্বীকার করেছিল| যেমন নতুন নিয়ম বলছে, ‘‘মাংসের [অপরিত্রাণপ্রাপ্ত] ভাব ঈশ্বরের প্রতি শত্রুতা’’ (রোমীয় 8:7)| ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা পাপী মানুষের স্বভাব| লোকেরা ছড়িয়ে পড়তে এবং পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করতে অস্বীকার করেছিল| কি ঘটেছিল?

হামের পুত্রদের মধ্যে একজন ছিলেন কূশ, যিনি নিম্রোদের পিতায় পরিণত হয়েছিলেন (আদিপুস্তক 10:6-9)| নিম্রোদ ছিলেন একজন অহঙ্কারী এবং খারাপ মানুষ| বাবিল [ব্যাবিলন] শহর থেকে শাসন চালানোর সময়ে, তিনি শিনারের [পরে যাকে ব্যাবিলিনিয়া বলা হয়] ভূমিতে, একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন| রাজা নিম্রোদের সঙ্গে সঙ্গে, তার লোকেরাও পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করতে অস্বীকার করেছিল| তারা বলেছিল, ‘‘আইস, আমরা আমাদের নিমিত্তে এক নগর ও গগনস্পর্শী এক উচ্চগৃহ নির্ম্মান করিয়া; আমাদের নাম বিখ্যাত করি, পাছে সমস্ত ভূমন্ডলে ছিন্নভিন্ন হই’’ (আদিপুস্তক 11:4)| তারা ছড়িয়ে পড়তে চায়নি| তারা চেয়েছিল একটি শহর এবং একটি উঁচু বাড়ি, তাদের গৌরব প্রদর্শন করার জন্য একটি ক্ষমতা-কেন্দ্র নির্মান করতে|

কিন্তু ঈশ্বর তাদের বিচার করেছিলেন| তিনি সেই উঁচু বাড়িটি নির্মান করা থেকে তাদের বিরত করেছিলেন| সেই সময় অবধি প্রত্যেকে একই ভাষায় কথা বলত| ‘‘সমস্ত পৃথিবীতে এক ভাষা, ও একরূপ কথা ছিল’’ (আদিপুস্তক 11:1)| আর ঈশ্বর বলেছিলেন,

‘‘আইস আমরা নীচে গিয়া, সেই স্থানে তাহাদের ভাষার ভেদ জন্মাই, যেন তাহারা একজন অন্যের ভাষা বুঝিতে না পারে| আর সদাপ্রভু তথা হইতে সমস্ত ভূমন্ডলে তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিলেন: এবং তাহারা নগর পত্তন হইতে নিবৃত্ত হইল| এই জন্য সেই নগরের নাম বাবিল [‘বাবিল’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘দ্বিধা’] থাকিল; কেননা সেই স্থানে সদাপ্রভু সমস্ত পৃথিবীর ভাষায় ভেদ [দ্বিধা] জন্মাইয়াছিলেন: এবং তথা হইতে সদাপ্রভু তাহাদিগকে সমস্ত ভূমন্ডলে ছিন্নভিন্ন করিয়াছিলেন’’ (আদিপুস্তক 11:7-9)|

ঈশ্বর তাদের ভাষার মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করেছিলেন| ‘‘বাবিল’’ নামের অর্থ হল ‘‘ভেদ|’’ লোকেরা একে অন্যদের কথা বুঝতে পারছিল না| প্রত্যেকটি লোক কেবলমাত্র তার নিজের ভাষার গোষ্ঠীর লোকদের সঙ্গে কথা বলতে পারত| তারা সেই গগনস্পর্শী বাড়িটির নির্মান শেষ করতে পারেনি| তাদের সমাজ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছিল| প্রত্যেকে আলাদা হয়ে গেছিল এবং তারা যাদের সঙ্গে কথা বলতে পারত সেই - অতি নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে চলে গেছিল| তারা পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করেছিল - তাদের সেইরকম করতে বাধ্য করা হয়েছিল| বাইবেল বলছে যে সেই সব দিনগুলিতে ‘‘পৃথিবী বিভক্ত হইল’’ (আদিপুস্তক 10:25)|

সেই প্লাবনের প্রায় 100 বছর আগে এই ঘটনা ঘটেছিল| মানবজাতি ছিল একটি সম্প্রদায়| এখনও তাই আছে! বাইবেল বলে ঈশ্বর ‘‘একব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন’’ (প্রেরিত 17:26)| সেই কারণে যে কোন পুরুষ যে কোন মহিলাকে বিয়ে করতে এবং সন্তান উৎপাদন করতে পারে| মানব জাতির সমস্ত জীব বৈচিত্র্য নোহ এবং তার পরিবারের মধ্যে নিহিত ছিল| কিন্তু বাবিলের সেই গগনস্পর্শী বাড়ির পরে, লোকেরা ভাষাভিত্তিক ক্ষুদ্রতর গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে গিয়েছিল| 100 বছর ধরে, তারা শুধু নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যেই বিয়ে করত| খুব শীঘ্রই একদল লোককে দেখতে অন্য দলের লোকদের মতন লাগছিল না| এই হচ্ছে সেই জায়গা যেখান থেকে বিভিন্ন জাতি এবং ভাষা এবং রাষ্ট্র তৈরী হয়েছিল| কিছু লোক ইউরোপে চলে গিয়েছিল এবং সেখানে তাদের ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিল| অন্যেরা আফ্রিকায় গিয়েছিল| কিছু লোক চীনদেশে চলে গিয়েছিল এবং একে অন্যের সঙ্গে চীনা ভাষায় কথা বলা শুরু করেছিল|

এই প্রক্রিয়া খুব অল্প কিছু সময় নিয়ে চলেছিল| ভাষা ভিত্তিক এই দলগুলি সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল| যাফেতের বংশধরেরা ইউরোপ, ভারতবর্ষ এবং চীনদেশ, এবং শেষ পর্যন্ত্য আমেরিকা মহাদেশে চলে গিয়েছিলেন| হামের বংশধরেরা আফ্রিকায় চলে গিয়েছিলেন| শেমের বংশধরেরা মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছিল|

যেখানেই তারা গিয়ে থাকুক না কেন মহাপ্লাবনের কথা তাদের স্মরণে ছিল| সেই কারণে বিশ্বের সব উপজাতিদের কাছে মহাপ্লাবনের বিষয়ে একটা উপকথা শুনতে পাওয়া যায়| উত্তরপশ্চিম আমেরিকার বাসিন্দারা একজন মানুষের কথা বলে যে একটি নৌকা বানিয়েছিল| ফিজি দ্বীপপুঞ্জের লোকদের কাছে মহাপ্লাবনের বিষয়ে একটা উপকথা আছে|

যেখানেই তারা গিয়ে থাকুক না কেন লোকদের একজন ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস ছিল| তারা এই বিশ্বাস নোহ এবং তার পরিবারের কাছ থেকে পেয়েছিল| উত্তর আমেরিকার আদিবাসীরা একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করত যাকে তারা মহান আত্মা বলে অভিহিত করত| প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায়, যে ভাষা ইউরোপ এবং ভারতবর্ষের ভাষাতে পরিণত হয়েছিল, আমরা শুনতে পাই ‘‘ডাইইয়াস-পেটার,’’ সেই ‘‘গড-ফাদার,’’ স্বর্গের পিতা-ঈশ্বরের বিষয়ে| এই ডাইইয়াস-পেটার থেকেই গ্রীক দেবতা জিউস এবং রোমান দেবতা জুপিটারের নাম হয়েছে|

মঙ্গোলীয়রা বিশ্বাস করত টেনগ্রাইতে, যা ছিল সেই পিতা ঈশ্বর থেকে সৃষ্ট এক মহান আকাশ-দেবতা| প্রাচীনকালে চীনদেশের লোকেরা একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন| ডঃ জেম্স লেগী (1815-1897) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক| তার বই, দ্য রিলিজিয়নস অফ চায়না (চার্লস স্ক্রাইবার’স সন্স, 1881)র মধ্যে, ডঃ লেগী দেখিয়েছেন যে চীনদেশের মূল ধর্ম ছিল একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখা, যাকে তারা বলত সাং তি (স্বর্গের রাজা)| খ্রীষ্টের দুই হাজার বছর আগে, কনফুসিয়াস এবং বুদ্ধের জন্মগ্রহণের বহু শতাব্দী আগে থেকেই, চীনা লোকেরা আরাধনা করে এসেছে একজন ঈশ্বরের - ঈশ্বর পিতা, স্বর্গের রাজার আরাধনা|

বৌদ্ধধর্ম চীনদেশের লোকেদের মূল ধর্ম ছিল না| বুদ্ধ চীনা ছিলেন না! তিনি ভারতবর্ষে বাস করতেন| ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধধর্ম চীনদেশে আনা হয়েছিল| চীনের মূল ধর্ম ছিল একেশ্বরবাদ, এক ঈশ্বরে বিশ্বাস - সাং তি, স্বর্গের সেই রাজা| পরবর্তীতে, কুসংস্কার এবং ভ্রান্তিসমূহ সংযুক্ত করা হয়েছিল| কিন্তু সাং তি, স্বর্গের সেই রাজা, ছিলেন চীনাদের মূল ঈশ্বর! ‘‘প্রশংসা, আমার আত্মা, স্বর্গের রাজা|’’ উঠে দাঁড়ান এবং এই গানটি করুন!

প্রশংসা, আমার আত্মা, স্বর্গের রাজা, তাঁহার পদদ্বয় তাহার প্রশংসা নিয়ে আসে;
   বন্দিত্বমোচন, আরোগ্য, পুনরুদ্ধার, ক্ষমা, কে তাঁহার গান করা উচিৎ মনে করে?
তাঁহার প্রশংসা! তাঁহার প্রশংসা! অনন্তকালীন রাজার প্রশংসা|

আপনারা এখন বসতে পারেন|

চীনদেশের লোকেরা কেন তাদের প্রকৃত ঈশ্বর থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন? কারণ তারা পাপী ছিলেন| পৃথিবীর সব লোক পাপী| প্রত্যেক দেশের প্রাচীন মানুষেরা পাপী ছিলেন| তাদের ‘‘ঈশ্বরের প্রতি শত্রুতা’’ ছিল (রোমীয় 8:7)| তারা ঈশ্বরকে কামনা করত না| সেইজন্যে তারা কুসংস্কার এবং প্রতিমা এবং ভ্রান্ত ধর্মের উদ্ভাবন করেছিল| বাইবেল বলছে,

‘‘কারণ ঈশ্বরকে জ্ঞাত হইয়াও, তাহারা তাঁহাকে ঈশ্বর বলিয়া তাঁহার গৌরব করে নাই, ধন্যবাদও করে নাই; কিন্তু আপনাদের তর্কবিতর্কে অসার হইয়া পড়িয়াছে, এবং তাহাদের অবোধ হৃদয় অন্ধকার হইয়া গিয়াছে| আপনাদিগকে বিজ্ঞ বলিয়া, তাহারা মূর্খ হইয়াছে, এবং ক্ষয়ণীয় মনুষ্যের, ও পক্ষীর, ও চতুষ্পদের, ও সরীসৃপের মূর্ত্তিবিশিষ্ট প্রতিকৃতির সহিত অক্ষয় ঈশ্বরের গৌরব পরিবর্ত্তন করিয়াছে’’ (রোমীয় 1:21-23)|

সমস্ত মানবজাতির মধ্যেই এইরকমটা ঘটেছিল| এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল মিশরে, ব্যাবিলনিয়াতে, ইউরোপে, ভারতবর্ষে, এবং চীনদেশেও ঘটেছিল| এটাই হল সেই জায়গা যেখান থেকে বিশ্বের ভ্রান্ত ধর্মগুলি এসেছিল| পাপী মানুষেরা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং সমস্ত মিথ্যা আচরণ গ্রহণ করেছিল| সেই আলো অনুজ্জ্বল হয়ে গেছিল| অন্ধকার বৃদ্ধি পেয়েছিল| মানুষের কাছে কোন আশা ছিল না|

ইনি ছিলেন ঈশ্বর যিনি প্রকাশিত হয়েছিলেন| ঈশ্বর নীচে চালডিসের উর নামের একটি পাপপূর্ণ শহরের দিকে দৃষ্টিপাত করেছিলেন| সেখানে অব্রাহাম নামের একজন লোককে বলেছিলেন, ‘‘আপনার পৈতৃক বাটি পরিত্যাগ করুন...আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব, এবং তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া...তাহাতে তুমি আশীর্ব্বাদের আকর হইবে...এবং তোমাতে ভূমন্ডলের যাবতীয় গোষ্ঠী আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে’’ (আদিপুস্তক 12:1-3)| ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন, ‘‘আমার তোমার জন্য আহ্বান আছে|’’ অব্রাহাম সেই প্রকৃত ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছিলেন| তিনি যিহুদী লোকদের পিতায় পরিণত হয়েছিলেন, পৃথিবীতে ঈশ্বর মনোনীত মানুষ|

ঈশ্বর আমাদের বাইবেল দেওয়ার জন্যে যিহুদী লোকদের ব্যবহার করেছিলেন| এবং ঈশ্বর তাঁর পুত্র যীশুকে মরিয়ম নামের এক যিহুদী কন্যার গর্ভে জন্ম নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন| সেখানে ইস্রায়েলে যীশু যৌবনে উপনীত হয়েছিলেন| আমাদের পাপের দেনা শোধ করার জন্য যীশু ইস্রায়েলে ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন| আমাদের পাপ ধুয়ে দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর রক্ত ঝরিয়েছিলেন| আমাদের জীবন দান করার জন্য তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন| সমগ্র মানবজাতির জন্য যীশু মৃত্যুবরণ করেছিলেন - শুধুমাত্র যিহুদীদের জন্য নয়, কিন্তু চীনদেশের এবং সমগ্র বিশ্বের লোকদের জন্য! খ্রীষ্ট করেছিলেন ‘‘পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত...কিন্তু সমস্ত জগতের পাপার্থক’’ (I যোহন 2:2)| সমস্ত মানবজাতির জন্য খ্রীষ্টধর্মই হচ্ছে একমাত্র ধর্ম| এটা ‘‘আমেরিকানদের ধর্ম’’ নয়| বেশির ভাগ আমেরিকানই প্রকৃত খ্রীষ্ট বিশ্বাসী নয়| খ্রীষ্ট কেবলমাত্র কোন একটি দেশ অথবা সংষ্কৃতির জন্য নয়| বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা বাস করেন, কারণ খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছিলেন ‘‘সমস্ত জগতের পাপের জন্য’’ - চীনাদের জন্য, কোরিয়ানদের জন্য, হিসপ্যানিকদের জন্য, আফ্রিকানদের জন্য - এবং আপনার জন্য! চীন এবং বিশ্বের সমস্ত জায়গার লোকে এখন খ্রীষ্টে বিশ্বাস করছেন| যীশু আপনার প্রতি বলছেন, ‘‘আমার নিকট আইস’’ (মথি 11:28)| যীশুর কাছে আসুন, তাঁকে বিশ্বাস করুন|

মানুষ কখনও নিজ চেষ্টায় ঈশ্বরের দর্শন লাভ করতে পারে না| বাইবেল বলছে, ‘‘তুমি কি অনুসন্ধান দ্বারা ঈশ্বরকে পাইতে পার?’’ (ইয়োব 11:7)| আসল সত্য হল, কেউ ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছা করেন না| বাইবেল বলছে, ‘‘এমন কেহ নাই ঈশ্বরের অণ্বেষন করে’’ (রোমীয় 3:11)| ইনি হলেন ঈশ্বর যিনি প্রকাশিত হন আমাদের মতন পাপীদের উদ্ধার করতে|

জগত সৃষ্ট হওয়ার আগে, ঈশ্বর পৃথিবীর কিছু লোকদের উদ্ধার করার পরিকল্পনা করেছিলেন| পাপীদের জন্য মৃত্যুবরণ করতে যীশুকে প্রেরণ করাটা সর্বদাই ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল| বাইবেল যীশু সম্পর্কে বলছে, ‘‘জগৎ পত্তনের সময়াবধি হত মেষশাবক’’ (প্রকাশিত বাক্য 13:8)| প্রত্যেক জায়গায় তাঁর লোকেদের জন্য এটাই ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পনা| খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছিলেন তাদের প্রত্যেকের জন্য যাদের তিনি উদ্ধার করেছিলেন|

বাইবেল বলে, ‘‘ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন [জাহির] করিতেছেন, কারণ, আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন’’ (রোমীয় 5:8)| বাইবেল বলছে, ‘‘ইহাতেই প্রেম আছে, আমরা যে ঈশ্বরকে প্রেম করিয়াছিলাম তাহা নয় [প্রেম করি নাই], কিন্তু তিনিই আমাদিগকে প্রেম করিলেন, এবং আপন পুত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত [ক্ষতিপূরণ করা] হইবার জন্য প্রেরণ করিলেন’’ (I যোহন 4:10)| ঈশ্বর আপনাকে এতটাই ভালবাসেন যে আপনার পাপের দেনা শোধ করার জন্য তিনি তাঁর পুত্র যীশুকে ক্রুশের উপরে মৃত্যবরণ করতে পাঠিয়েছিলেন| আপনার পাপ ধুয়ে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যীশু নিজের রক্ত ঝরিয়েছিলেন| আমি প্রার্থনা করছি যাতে আপনি শীঘ্র যীশুতে বিশ্বাস স্থাপন করেন|

উঠে দাঁড়ান এবং এই গানটি আবার করুন - ‘‘প্রশংসা, আমার আত্মা, স্বর্গের রাজা|’’

প্রশংসা, আমার আত্মা, স্বর্গের রাজা, তাঁহার পদদ্বয় তাহার প্রশংসা নিয়ে আসে;
   বন্দিত্বমোচন, আরোগ্য, পুনরুদ্ধার, ক্ষমা, কে তাঁহার গান করা উচিৎ মনে করে?
তাঁহার প্রশংসা! তাঁহার প্রশংসা! অনন্তকালীন রাজার প্রশংসা|

আমেন|


যদি এই প্রচার আপনাকে আশীর্বাদ দান করেছে তাহলে ডঃ হাইমার্স আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চান| যখন আপনি ডঃ হাইমার্সকে চিঠি লিখবেন তখন অবশ্যই তাকে জানাবেন যে কোন দেশ থেকে আপনি তাকে লিখছেন নয়ত তিনি আপনার ই-মেলের জবাব দিতে সক্ষম হবেন না| যদি এই প্রচার আপনাকে আশীর্বাদ দান করেছে তবে ডঃ হাইমার্সকে একট ই-মেল পাঠান এবং তাকে সেইকথা জানান, কিন্তু কোন দেশ থেকে আপনি লিখছেন চিঠিতে সেটা অবশ্যই অন্তর্ভূক্ত করবেন| ডঃ হাইমার্সের ই-মেল ঠিকানা হল rlhymersjr@sbcglobal.net (এখানে ক্লিক করুন) | আপনি যে কোন ভাষায় ডঃ হাইমার্সকে চিঠি লিখতে পারেন, কিন্তু যদি পারেন তো ইংরাজিতেই লিখুন| যদি আপনি ডঃ হাইমার্সকে ডাক-ব্যবস্থার মাধ্যমে চিঠি পাঠাতে চান, তবে তার ঠিকানা হল P.O. Box 15308, Los Angeles, CA 90015 | আপনি তাকে (818)352-0452 নম্বরে ফোন করতে পারেন|

(সংবাদের পরিসমাপ্তি)
ডঃ হাইমার্সের সংবাদ আপনি প্রতি সপ্তাহে ইন্টারনেটে www.sermonsfortheworld.com ওয়েবসাইটে গিয়ে পড়তে পারেন| ক্লিক করুন “প্রচার পান্ডুলিপি|”

আপনি ডাঃ হাইমার্সকে মেইল পাঠাতে পারেন rlhymersjr@sbcglobal.net - আপনি
তাকে পত্র লিখতে পারেন P.O. Box 15308, Los Angeles, C A 90015.এই ঠিকানায়
। আপনি তাকে টেলিফোন করতে পারেন (818) 352-0452.

এই সুসমাচারের ম্যানুস্ক্রিপ্ট এর ওপর ডাঃ হাইমসের কোন কপিরাইট নেই। আপনারা
ইহা ব্যাবহার করতে পারেন ডাঃ হাইমসের অনুমতি ছাড়াই। অবশ্য, ভিডিও মেসেজ
সবই কপিরাইটের সহিত আছে এবং কেবলমাত্র তার অনুমতি নিয়েই ব্যাবহার করা যাবে।

সংবাদের আগে শাস্ত্রাংশ পাঠ করেছেন মিঃ আবেল প্রুধোম্মে: রোমীয় 1:21-23 |
সংবাদের আগে একক সংগীত পরিবেশন করেছেন মিঃ বেঞ্জামিন কিনকেড গ্রিফিত:
“Jesus Shall Reign” (Dr. Isaac Watts, 1674-1748) |